ক্রেতা সচেতনতা বাড়াতে কুইজের ব্যবহার

September 29, 2023
Nezam Uddin

যখন আমরা এমন কোন প্রোডাক্ট/ সেবা নিয়ে কাজ করি, যেটা আগে থেকেই বাজারে আছে, তখন কাস্টমারকে এটা সম্পর্কে সচেতন করতে হয় না বা নতুন করে এর সম্পর্কে শেখাতে হয় না। এক্ষেত্রে চ্যালঞ্জ হলো মার্কেটে এর মাঝেই শক্ত প্রতিযোগী আছে, যারা First-Mover।

বেশিরভাগ স্টার্টআপ নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করে, ফলে তাদের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের একটি হল কাস্টমারকে এডুকেট করা। ভালো দিক হল এ ধরনের বাজারে কম্পিটিশন থাকে খুব অল্প অথবা একেবারেই থাকে না। কঠিন দিক হল কাস্টমারকে এই প্রোডাক্ট সম্পর্কে কনভিন্স করা।

কাস্টমারকে শিক্ষিত করার অনেকগুলো উপায়ের একটি উপায় হল তার না জানা বা অজ্ঞানতাকে তার কাছে পরিষ্কার করে তুলে ধরা। কাজটা এমন ভাবে করতে হয়, যাতে ক্রেতা অপমানিত বোধ না করেন বা কোন রকমের অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে না পড়েন।

ক্রেতা সচেতনতায় কুইজ

এক্ষেত্রে কুইজের ভূমিকা হল কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি ক্রেতাকে হেল্প করবেন যাতে তিনি বুঝতে পারেন কোন একটা বিষয় সম্পর্কে উনি জানেন না এবং এই জিনিসটা ওনার দরকার।

কুইজ কিভাবে কাজ করে?

সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে আমাদের ক্রেতাদের বিনোদনের একটি অংশ হল সামাজিক মাধ্যম যেমন ফেসবুকে সময় কাটানো, বিভিন্ন বিনোদনমূলক কনটেন্ট দেখা ইত্যাদি। প্রায় সবাই এখন কন্টেন্টের গুরুত্ব বোঝেন এবং অডিও ভিজুয়াল কন্টেন্ট তৈরি করেন। ফলে কনটেন্ট দিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করা তুলনামূলকভাবে কঠিন।

এক্ষেত্রে কুইজ আপনার সম্ভাব্য ক্রেতাকে এক ধরনের মানসিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে যায় এবং বেশিরভাগ ক্রেতা চ্যালেঞ্জ নিয়ে কুইজে অংশ নেয়।

সফল কুইজ বানানোর ক্রাইটেরিয়া

সহজবোধ্যতা

ক্রেতাকে সচেতন করার কুইজ হতে হবে সহজবোধ্য এবং সাধারণ ক্রেতাদের বুদ্ধিভিত্তিক ক্যাপাসিটির মধ্যে। এমন কোন জারগন বা টার্ম ব্যবহার করা যাবে না যেটা ক্রেতা জানেন না। এতে ক্রেতা কুইজে আগ্রহ হারাবেন এবং শেষ না করেই কুইজ থেকে বের হয়ে যাবেন।

সংশ্লিষ্টতা (Relevance)

প্রশ্ন এমন ভাবে ডিজাইন করতে হবে যাতে ক্রেতা তার বর্তমান অবস্থার সাথে প্রশ্নগুলোর মিল খুঁজে পান, এবং ভুল শুদ্ধ যেকোনোভাবে উত্তর দিতে পারেন।

সংক্ষিপ্ততা (Brevity)

অহেতুক অনেক প্রশ্ন দিয়ে কুইজ লম্বা করা যুক্তিহীন কারণ দুই থেকে তিন মিনিটের বেশি সময় লাগে এ ধরনের কুইজে কেউ সময় দিতে চাইবে না। কুইজে প্রশ্নের মাঝে এক ধরনের ধারাবাহিকতা থাকা দরকার।

স্কোরিং

ওই যে প্রশ্নগুলোতে স্কোর সেট করুন, আপনার অন্য বা সেবার সাথে সম্পৃক্ত এ ধরনের প্রশ্নে স্কোরের তারতম্য করতে পারেন। কুইজে একটা মোট স্কোর থাকা উচিত এবং ক্রেতা কি পরিমাণ স্কোর পেল সেটা কুইজের শেষে ক্রেতাকে জানিয়ে দিতে পারেন। একই সাথে কোন স্কোর কী অর্থ বহন করে সেটা জানিয়ে দিতে পারেন।

যেমনঃ ১০ স্কোরের মাঝে ৭ এর বেশি পেলে সেটা বেশ ভাল, তবে ৫ এর কম পেলে আপনার এটা উন্নত করার চেষ্টা করা উচিত এবং এই পণ্য/সেবা আপনাকে হেল্প করবে।

লিড সংগ্রহের ব্যবস্থা

কুইজ এমন প্লাটফর্মে হোস্ট করুন যাতে আপনি কুইজে অংশগ্রহণকারীর তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন, লিড হিসেবে এ ধরনের অংশগ্রহণকারীদের তথ্য খুবই কাজের হতে পারে।

উৎসাহমূলক ব্যবস্থা রাখা (Reward mechanism)

কুইজে অংশ নেয়ার জন্য কোন ধরনের পুরস্কার বা ইনসেন্টিভ সেট করুন

কেইস স্টাডি

মাতৃত্ব প্রিনেটাল কুইজের স্ক্রিনশট

মাতৃত্ব ডট কম ২০১৪ সাল থেকে বাংলা ভাষায় গর্ভকালীন পড়াশোনা বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে। ২০২২ সালে এসে প্রতিষ্ঠানটি প্রিনেটাল কোর্স নামে গর্ভবতীয় ও সন্তানপ্রত্যাশী দম্পতিদের জন্য এক ধরনের অনলাইন ক্লাস নিয়ে এসেছে, যেটা বাংলাদেশের বাস্তবতায় নতুন। পশ্চিমা দেশগুলোতে হাসপাতালে গর্ভবতী নারীদের এন্টিনেটাল কেয়ারের সাথে এ ধরনের ক্লাসের আয়োজন করা হয়।

যেহেতু বাংলাদেশের ধারণাটি নতুন, তাই দম্পতিদের মাঝে এ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরীর জন্য মাতৃত্ব টিম একটি কুইজ ডিজাইন করে। এই কুইজটিতে বেশ কিছু প্রশ্ন আছে এবং ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মাঝে সম্পন্ন করা যায়। কুইজটি গুগল ফর্মে তৈরি করা আছে এবং লিড সংগ্রহের অংশ হিসেবে কুইজে ইমেইল সংগ্রহ করা হয়। ফর্ম সাবমিট করার পর অংশগ্রহণকারীকে স্কোর দেখিয়ে দেয়া হয় এবং মাতৃত্ব টিম মাঝে মাঝে সংগৃহীত ইমেইলে কুইজের স্কোরগুলো আবার পাঠিয়ে দেন। এতে সংগৃহীত লিড ভেরিফিকেশনও হয়ে যায়।

চালু করার ৬ মাসের মাঝে ৭০০র বেশি নারী ও পুরুষ এতে অংশগ্রহণ করেছেন। যদিও মাতৃত্ব টিম কুইজ থেকে কনভারশন কেমন হচ্ছে সেটা পরিমাপ করা তেমন কোন ব্যবস্থা নেন নাই, তবে এটা পরিষ্কার যে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।

কুইজের একেবারে শেষের দিকে সর্বশেষ চলমান প্রমোশনাল অফারটি যোগ করে দিয়েছে মাতৃত্ব, মাঝে মাঝেই তারা এটা আপডেট করেন। এছাড়াও যখন কুইজের স্কোর ইমেইল করা হয় সেই মেইলে প্রমোশনাল অফার, দরকারি তথ্য যোগ করে দেয় মাতৃত্ব টিম।

সব মিলিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, লিড সংগ্রহ এই দুই উদ্দেশ্য বেশ ভালোভাবেই অর্জিত হয়েছে।

এখানে কুইজটির লিংক দেয়া হলোঃ মাতৃত্ব প্রিনেটাল কুইজ

শেষ কথা

যদিও এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ নতুন পণ্য বা সেবার ধারণাকে জনপ্রিয় করার জন্য কুইজ ব্যবহারের কথা বললাম, একটু বুদ্ধি খাটালে অন্যান্য আরো অনেক ক্ষেত্রে কুইজ ব্যবহার করা যায়। যেমন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রোডাক্টের ক্রেতাদেরকে টার্গেট করে কুইজ চালু করা, যাতে তারা বুঝতে পারে আমাদের প্রোডাক্ট ব্যবহার না করার কারণে তারা কী কী ফিচার মিস করছেন।

একটি সফল কুইজ ডিজাইন করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ক্রেতার মনস্তত্ত্ব বোঝা এবং Iteration বা ক্রমাগত সংযোজন বিয়োজনের মাধ্যমে একটা কার্যকর কুইজ তৈরি করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *