মানুষের মতো ভুলোমনা জীব কমই আছে। সবসময় মনে করিয়ে দিতে হয়। মনে করিয়ে না দিলে মনে থাকার সম্ভবনার চেয়ে ভুলে যাবার নিশ্চয়তা বেশি। সেই মানুষ যদি আপনার ক্রেতা হন, তাহলে আরো বেশি ভুলো মনা হবে। কারণ
- সীমিত মনযোগ: মনযোগকে আপনি একটা রিসোর্স হিসেবে চিন্তা করতে পারেন। যে কোন রিসোর্সের মতো এটাও সীমিত। অনেক বিষয়ে মনযোগ দিতে গেলে সহসাই আপনি পরিশ্রান্ত অনুভব করবেন। আমাদের এখনকার জীবনযাত্রায় মনযোগ দেয়ার মতো বিষয়ের অভাব নেই। তাই আপনার ক্রেতা ভুলে যাবেই।
- প্রতিযোগীতা: যেহেতু মনযোগ সীমিত, তাই আপনার প্রতিযোগী ব্যবসা ক্রেতার মনযোগ পেতে মার্কেটিংএ খরচ করছেন। ফলে সীমিত মনযোগের জন্য যখন আপনারা সবাই যুদ্ধরত, তখন ক্রেতা আগের থেকে আরো বেশি দিশেহারা এবং ফলতঃ ভুলোমনা।
কীভাবে মনে করিয়ে দেয়া যায়?
১. নিয়মিত প্রচারনা
মার্কেটার হিসেবে আপনাকে নিয়মিত প্রচারণামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে। কখনো সেটা সরাসরি পণ্যের প্রচার, কখনো জনসচেতনতনামূলক প্রচার। ক্রেতার মনযোগের কেন্দ্রে থাকার চেষ্টা করতে হবে। অথবা নূ্ন্যতমপক্ষে ক্রেতার Consideration set এ থাকতে হবে।
২. ক্যাম্পেইন:
সময় সময় আপনি আপনার পণ্য/সেবার বিক্রি বাড়াতে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চালাতে পারেন। ক্যাম্পেইন হতে পারে সীজনাল (শীতের আগে শীতবস্ত্রের প্রচারণা), হতে পারে আপনার কোন পণ্যের Launching এর সময়।
৩. ক্যাম্পেইনের Followup:
ধরুন আপনি অনলাইনে কোর্স বিক্রি করেন। আপনার এডটেক প্ল্যাটফর্মে বিক্রি বাড়াতে সব কোর্সে ৫০% ডিসকাউন্ট দিচ্ছেন। বেশ বড়সড় একটা টার্গেট ক্রেতার কাছে এই খবর বিভিন্ন ভাবে পৌছে দিলেন। ক্যাম্পেইন পরবর্তী কনভার্শনের সাধারণ ধারনা অনুসারে ১০-২০% ক্রেতা সক্রিয় ভাবে আপনার ক্যাম্পেইনটি দেখবে। ফেসবুক ক্যাম্পেইনের গড় কনভার্শন রেট ১০%, ইমেইল মার্কেটিং এর গড় ওপেন রেট ১৮-২০%।
এই ১০ - ২০% অডিয়েন্স, যারা আপনার ক্যাম্পেইনট সক্রিয়ভাবে দেখেছেন, তাদের যদি আপনি মনে করিয়ে না দেন, তাহলে এদের মাঝে মাত্র ১% হয়তো আপনার কোর্স কিনতে পারে। কারণ ক্যাম্পেইনটি প্রথমবার দেখার সময় হয়তো ক্রেতা হিসেবে আমি ভাবছি "কোর্সটি করা যায়, কিন্তু বিকাশে তো এখন ব্যালেন্স নাই"। তাই ফলোআপ করার কোন বিকল্প নেই।
ফেসবুক মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে তাদের পিক্সেলভিত্তিক রিমার্কেটিং করে আপনি ফলোআপ ক্যাম্পেইন করতে পারেন। ইমেইল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ওপেন ও ক্লিক রিপোর্টের ভিত্তিতে সেগমেন্ট করে তাদের কাছে "Reminder campaign" পাঠাতে পারেন।
৪. ট্রানজেকশনাল যোগাযোগ:
এই ধরনের যোগাযোগকে প্রায় সবাই গুরুত্বহীন মনে করে এড়িয়ে যায়। একজন ক্রেতা আপনার সাইটে অর্ডার করলো, ইমেইল নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইব করলো, বা ফেসবুক পেইজে মেসেজ দিলো - এই প্রতিটা ইভেন্টে ক্রেতার বিরক্তির উদ্রেক না করেই একাধিকবার তার সাথে যোগাযোগ করা যায়।
ক্রেতা সাইটে অর্ডার করেছে, তাকে অর্ডারের প্রতিটি স্টেজে ইমেইল ও এসএমএস করে আপডেট জানাতে পারেন। নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করেছে, তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেইল করতে পারেন। সেই মেইলে তাকে আপনার বাছাইকৃত ৫টা পন্য/সেবা বা সাইটের কন্টেন্টের লিংক দিয়ে সেগুলো পড়ে দেখার আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।
এছাড়াও এসব Transactional communication এর প্রতিটি ধাপে ফুটারে ছোট কিন্তু আকর্ষনীয় মেসেজ দিয়ে [ক্রস সেল/ আপ সেল] ক্রেতাকে আপনার সাইটে/পেইজে নিয়ে যেতে পারেন। যত বেশি সংখ্যকবার ক্রেতা আপনার সাইটের ল্যান্ডিং পেইজে বা ফেসবুক পাতায় যাবে, তার Conversion এর সম্ভাবনা তত বাড়বে।
বেশিরভাগ সময় মার্কেটাররা এই সুযোগগুলোকে এড়িয়ে যান। এর কারণ মূলত এই ধরনের ফীডব্যাক সাইকেল সেটাপ করা একটু বিরক্তিকর ও ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া এবং এই পরিশ্রমের ফল ২/১ দিনের মাঝে দৃশ্যমান হয়ে উঠেনা, যেটা একটা ফেসবুক ক্যাম্পেইনের ক্ষেত্রে হয়। আপনি যদি আপনার ক্যাটাগরির কোন গ্লোবাল জায়ান্টের সাইট থেকে কিছু কিনেন বা তাদের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করেন, তাহলে দেখবেন তারা ক্রেতার কাছে নিজের বক্তব্য পৌছে দেয়ার কোন সুযোগ হাতছাড়া করে না।
রিমাইন্ডার মার্কেটিং এর জন্য কোন মাধ্যম বেশি ভালো - ফেসবুক না ইমেইল?
এই দুটোর মাঝে সরাসরি তুলনা করা সম্ভব না। আম আর আপেলের তুলনা হয়ে যাবে। তবে সাধারণভাবে বলা যায় ফেসবুক নতুন ক্রেতার সন্ধানে বেশি সফল, আর ইমেইল তার নিজস্ব বৈশিষ্ঠের কারণে "মনে করিয়ে দেয়ায়" বেশি কার্যকর।
প্রবাহ'তে রিমাইন্ডার মার্কেটিং কীভাবে করবেন?
প্রবাহ ফুল-ফীচারড ইমেইল মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম এবং এর কার্যকর টুলস ও সেগমেন্ট করার অপশন ব্যবহার করে আপনি খুব সহজেই আপনার ক্রেতা বা সম্ভাব্য ক্রেতাকে আপনার পণ্য/সেবা বা যেকোন খবর/কন্টেন্ট জানিয়ে দিতে পারবেন। একটা উদাহরণ দিচ্ছি:
আপনি অনলাইনে কোর্স বিক্রি করেন। আপনার এডটেক প্ল্যাটফর্মে বিক্রি বাড়াতে সব কোর্সে ৫০% ডিসকাউন্ট দিচ্ছেন। প্রবাহ থেকে বেশ বড়সড় একটা টার্গেট ক্রেতার কাছে এজন্য ইমেইল ক্যাম্পেইন পাঠালেন।
আপনার ১৫% ইমেইল গ্রাহক আপনার ক্যাম্পেইন খুলেছে। ক্লিক রেইট ৫% । ধরে নিলাম কনভার্শন আপনার মনমতো হয়নি।
কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখলেন:
১. আপনার ল্যান্ডিং পেইজের বক্তব্য যথেষ্ট স্পষ্ট ও আকর্ষনীয় না
২. পেইজটা লোড হতে বেশি সময় নেয়।
৩. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: ডিসকাউন্টের পরিমাণ আরো বাড়ানো দরকার।
এইসব ইনসাইটের ভিত্তিতে ল্যান্ডিং পেইজের সমস্যার সমাধান করে ডিসকাউন্ট বাড়িয়ে আবার ক্যাম্পেইন পাঠানোের সিদ্ধান্ত নিলেন। আপনার হাতে দুটো অপশন:
১. সব সাবস্ক্রাইবারদের আবার ক্যাম্পেইন পাঠানো
২. আগের ক্যাম্পেইনে যারা ওপেন/ক্লিক করেছে শুধু তাদের পাঠাবেন
আরেকটা বিষয় খেয়াল করলেন, যারা ওপেন করেছে তারা সবাই ক্লিক করেনি। সম্ভাব্য কারণ:
১. ইমেইলের বক্তব্য/ডিজাইন আরো অপটিমাইজ করতে হবে
২. অফার যথাযথ না, হয়তো এই অফারকে অন্য কোন কোর্সের সাথে বান্ডল করে দিলে ভ্যালু বাড়বে
৩. হয়তো সাবস্ক্রাইবর ব্যস্ত ছিল, তাই ক্লিক করেনি। একটু অফ-পিক/অফিস টাইমেই বাইরে মেইল করা দরকার
কারণ যাই হোক, এটা একটা রিমাইন্ডার ক্যাম্পেইন পাঠানোর মতো উপযুক্ত অবস্থা।
বেশ কয়েকটা ক্যাম্পেইনের এনালাইটিক্স নিয়ে দেখলেন, একটা সেগমেন্ট কখনোই মেইল খুলছে না বা ক্লিক করছে না। এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এদের সক্রিয় করতে যা করতে পারেন:
১. আরো বেশি ডিসকউন্ট অফার করে মেইল পাঠাতে পারেন
২. সম্ভব হলে অন্যকোন মিডিয়া, যেমন এসএমএস করতে পারেন, অথবা কল দিবেন।
৩. সক্রিয় হতে বলবেন অথবা নিষ্ক্রিয়তার কারণে লিস্ট থেকে বাদ দেয়ার কথা জানিয়ে দিবেন
এধরনের "মৃত" সাবস্ক্রাইবারদের নিয়মিত ক্যাম্পেইন না পাঠানোই ভাল। সম্ভব হলে এদের খুঁজে বের করে সাইটে তাদের ড্যাশবোর্ডে একটা নোটিশ দিলেন যাতে তার ইমেইল সঠিক কি না তা নিশ্চিত করে।
এভাবে বিভিন্ন দৃশ্যপটে বিভিন্নভাবে আপনার ক্যাম্পেইন ও কম্যুনিকেশনকে আর যথাযথ করা সম্ভব।